বিখ্যাত ইতালীয় কবি দান্তে ১২৬৫ সালের ১৩ মে ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম দুরান্তে দেইলি আলিঘিরেরি। তিনি ছিলেন মধ্যযুগের প্রধান ইতালীয় কবি। ডিভাইন কমেডি তার রচিত অমর মহাকাব্য। ভেনিশিয়া ভাষায় রচিত এ কাব্যে তিনি চার্চ এবং সমসাময়িক বিখ্যাত ঘটনা এবং ব্যক্তিবর্গের ব্যঙ্গাত্মক ঘটনা নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সব ইতালীয় ভাষার পিতৃপুরুষ হিসেবে স্বীকৃত তিনি।
পারিবারিকভাবে বিত্তশালী না হলেও দান্তেদের পরিবার ছিল সে সময় অভিজাত ও প্রভাবশালী।
দান্তের শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে তেমন কিছু জানা যায় না। ধারণা করা হয়, বাড়িতেই তার পড়াশোনা শেষ হয়। সিসেরো, ওভিদ এবং ভার্জিলের কবিতায় তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। জানা যায়, দান্তে ৯ বছর বয়সেই বিয়েট্রিস পর্টিনারি নামে এক ফ্লোরেন্সীয় মেয়ের প্রেমে পড়েন। দান্তে কখনোই তার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন না। তবে তার রচনায় এই রমণীর কথা বিভিন্নভাবে মূর্ত হয়ে উঠেছে। পরবর্তীকালে দান্তে রাজনীতিতে জড়িত হয়ে পড়েন এবং নির্বাসিত হন। ১৪২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, লেখিকা ও পরিসংখ্যানবিদ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত সেনাদের সেবাদান করে তিনি নার্সিংকে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে তুলে ধরেন। তাকে বলা হতো লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প। লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে তিনি নার্সিংকে পেশা হিসেবে রূপ দেন ১৮৬০ সালে। এখন যারা এ পেশায় নতুন আসেন তারা ‘নাইটিঙ্গেল প্লেজ’ নামে একটি শপথ গ্রহণ করে তার প্রতি সম্মান জানান।
নাইটিঙ্গেল বিশ্বাস করতেন স্রষ্টা তাকে সেবিকা হওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। এ কারণে মা এবং বোনের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও এ পেশায় তিনি এসেছিলেন। তিনি শুধু একজন স্ত্রী কিংবা মা হিসেবে তার পরিচিতি সীমাবদ্ধ থাক—এটা মেনে নিতে পারেননি। পারিবারিক বাধা সত্ত্বেও কঠোর পরিশ্রম করে তিনি নার্সিংয়ে জ্ঞানার্জন করেন।
পরবর্তী সময়ে ফ্লোরেন্স ভারতের গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এক পরিসংখ্যান-নির্ভর গবেষণা চালিয়েছিলেন, যা ভারতে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা বিধানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৮৫৯ সালে তিনি রয়্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সোসাইটির প্রথম সারির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট লন্ডনের পার্ক লেনে তিনি মারা যান।
খ্যাতিমান স্প্যানিশ পরাবাস্তববাদী (Surrealist) চিত্রকর সালভাদর দালি ১৯০৪ সালের ১১ মে সেদেশের ফিগারেসে জন্মগ্রহণ করেন।
একজন নিখুঁত শিল্পী হিসেবে তিনি তার কর্মে যে বিষয়বস্তুর রূপদান করেন তা অদ্ভুত ও আবেদনময়ী। বলা হয়ে থাকে, তার শিল্পকর্মে নবজাগরণের প্রভাব পড়েছিল। ভাস্কর্য, চলচ্চিত্র এবং ফটোগ্রাফির মধ্যে তার বিশাল শিল্প প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। অতি উচ্চ মার্গের কল্পনাশক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। অনেক সময় শিল্পকর্মের চেয়ে খামখেয়ালি আচরণের জন্যও তিনি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছিলেন।
দালির বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী। তার মা ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। এ সময় দালির বয়স ছিল ১৬। মায়ের মৃত্যু তার জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যায়।
১৯২২ সালে দালি মাদ্রিদে চলে আসেন এবং একাডেমিয়া ডি সান ফার্নান্দোতে পড়াশোনা করেন। কিউবিজম নিয়েও তিনি ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
ফ্যাকাল্টিতে তাকে পরীক্ষা নেয়ার যোগ্যতা কারও নেই—এই উক্তি করে তিনি একাডেমিয়া থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে দালির শিল্পকর্মে পাবলো পিকাসো এবং হুয়ান মিরোর প্রভাব পড়েছিল।
১৯৮৯ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি ফিগারেসে মৃত্যুবরণ করেন।
হিন্দুস্থানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ মিয়া তানসেন ১৫৮৯ সালের ৬ মে (প্রাপ্ত তথ্যমতে) মৃত্যুবরণ করেন। বলা যায়, এই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের বৈচিত্রের স্রষ্টা তিনি। এক অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী তানসেন বহু গান সৃষ্টির পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র রাবারকে এ অঞ্চলে জনপ্রিয় করেছিলেন। আকবরের নবরত্ন সভার অন্যতম ছিলেন তিনি। তার পুরো নাম রামতনু পাণ্ডে। আকবর তাকে মিয়া উপাধিতে ভূষিত করেন।
তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে। তার বাবা মুকুন্দ পাণ্ডে ছিলেন একজন কবি। পারস্য ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গীতের কিছু উপকরণ যখন ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে মিশ্রিত হচ্ছিল তখন তার জন্ম একটি যুগসন্ধিক্ষণের সাক্ষী হয়ে থাকে। মধ্য ভারতের সাতনা জেলার কাছে একটি গ্রামে তার জন্ম।
বৃন্দাবনের কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ স্বামী হরিদাসের শিষ্য ছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর তানসেন বাড়ি ফিরে যান এবং সেখানে বিখ্যাত মুসলিম সাধক মুহম্মদ গাউসের সংস্পর্শে আসেন। ধারণা করা হয়, গাউসের সংস্পর্শে এসে তিনি ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন। অন্তত তার সমাধিতে তা-ই প্রতীয়মান হয়।
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৮২১ সালের ৫ মে যুক্তরাজ্যশাসিত সেন্ট হেলেনা দ্বীপের লঙউডে নির্বাসিত অবস্থায় পরলোকগমন করেন। ফরাসি বিপ্লবের সময় তিনি ছিলেন একজন জেনারেল। ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রথম কনসাল ছিলেন তিনি। ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই জেনারেল প্রথম নেপোলিয়ন নামে ১৮০৪-১৮১৫ সাল পর্যন্ত ফরাসি সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ইতালিরও রাজা ছিলেন। তার নেতৃত্বে ফরাসি সেনাবাহিনী এক দশকের বেশি সময় ধরে সব ইউরোপীয় শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল আয়ত্তে নিয়ে আসে। ১৮১২ সালে তার নেতৃত্বে ফরাসি বাহিনী রাশিয়ায় যে আগ্রাসন চালায় তা ইউরোপের রাজনীতিতে মহাসন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত। রাশিয়ায় আক্রমণ এবং ১৮১৩ সালে লিপজিগে পরাজয়ের পর ষষ্ঠ কোয়ালিশন ফ্রান্সে আগ্রাসন চালায়। এর ফলে ১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পশ্চাত্পসারণ করতে বাধ্য হন। ১৮১৫ সালে তিনি ওয়াটার লু যুদ্ধে হেরে যান। এর ফলে জীবনের বাকি ৬ বছর তাকে আটলান্টিক মহাসাগরে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়। ১৭৬৯ সালে ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের করসিকার এজাসিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার জীবনে তার মায়ের প্রভূত প্রভাব পড়েছিল। ১৭৮৫ সালে প্রশিক্ষণ শেষ করে বোনাপার্ট সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন পান। ১৭৮৯ সালের বিপ্লবের আগ পর্যন্ত নেপোলিয়ন ভ্যালেন্স এবং এক্সনে সেনা রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৫ সালের ১ মে বার্লিনে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন নািস নেতা ও হিটলারের প্রচারমন্ত্রী যোসেফ গোয়েবলস। এর আগে তারা নিজেদের ছয় সন্তানকে হত্যা করেন। গোয়েবলস ১৯৩৩-৪৫ সাল পর্যন্ত নািস জার্মানির প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রধান ছিলেন। বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতা এবং ইহুদিবিরোধী তত্পরতার জন্য তিনি কুখ্যাত ছিলেন। জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে যে ধারাবাহিক আক্রমণ সূচিত হয়েছিল তাতে তার হাত ছিল এবং এর ফলেই সেখানে ব্যাপক ইহুদি হত্যাযজ্ঞ (ঐড়ষড়পধঁংঃ) সংঘটিত হয়। ফ্রেঞ্চ অকুপেশন অব দ্য রূহর’র সময় তিনি নািস পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯২৪ সালে এর সদস্য হন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তার মাশুল দিতে হয়েছিল তাকে। তিনি কিছু নাটক এবং উপন্যাস লিখলেও প্রকাশকরা তা ছাপায়নি।
১৯২১ সালে হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি লাভ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেন। এছাড়া ব্যাংকের করণিক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৯৭ সালের ২৯ অক্টোবর জার্মানির প্রুশিয়ায় তার জন্ম হয়। ১৯৪৫ সালের শুরুতে সোভিয়েত ও মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা যখন রাইন নদী অতিক্রম করছিল তখনই তিনি বুঝতে পারেন জার্মানীর পরাজয় অনিবার্য। ৩০ এপ্রিল হিটলারের আত্মহত্যার পর গোয়েবলস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং ১ মে তিনি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন।
প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক সত্যজিত্ রায় ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল কলকাতায় পরলোকগমন করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং তার কাজের পরিমাণও বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উত্সবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল (ইবংঃ ঐঁসধহ উড়পঁসবহঃ)' পুরস্কারটি। পথের পাঁচালি, অপুর সংসার ও অপরাজিত—এই তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে বলা হয় ‘অপুত্রয়ী’ এবং এগুলো তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে স্বীকৃত। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরেও কাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ১৯৯১ সালে পাওয়া একাডেমি পুরস্কার (অস্কার)। ১৯২১ সালের ২ মে সত্যজিত্ জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায়। বাংলা সাহিত্যের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র উপেন্দ্রকিশোর রায় ও সুকুমার রায় ছিলেন তার পিতামহ ও পিতা। সত্যজিত্ কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জাঁ রেনোয়ার সংস্পর্শে এবং লন্ডন সফরে ইতালীয় ছবি ‘বাইসাইকেল থিভস’ দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।
উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ আলী আকবর খান ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। সরোদ বাদনে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। পিতা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান ভারতের মধ্যপ্রদেশের মাইহারে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের যে ঘরানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা পশ্চিমাঞ্চলে বিকশিত হয়েছিল আলী আকবর খানের হাত ধরেই। সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি বাবার কাছে। তবলা শেখেন চাচা ফকির আফতাবউদ্দিনের কাছে।
১৯৫৫ সালে তিনি বিখ্যাত বেহালাবাদক ইয়েহুদি মেনুহিনের আমন্ত্রণে আমেরিকা যান এবং পরবর্তী সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় স্থায়ী হন। আলী আকবর খান ৫ বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ভারতের পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন।।
আলী আকবর খানের জন্মের কিছুকাল পরই তাদের পরিবারটি কুমিল্লা ছেড়ে মাইহারে পাড়ি জমায়। ১৯৩৬ সালে ১৩ বছর বয়সে এলাহাবাদে তিনি প্রথম কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন। বাবার সুপারিশে তিনি যোধপুরের মহারাজার দরবারে প্রধান সঙ্গীতজ্ঞের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। জীবনে তিনবার তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ২০০৯ সালের ১৮ জুন ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি ম্যাক আর্থার ফেলোশিপ এবং ন্যাশনাল হেরিটেজ ফেলোশিপের এনডাওমেন্ট ফর দ্য আর্টস পুরস্কারও লাভ করেছিলেন
ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ নিতীন বসু ১৯৮৬ সালের ১৩ এপ্রিল (মতান্তরে ১৪ এপ্রিল) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে পরিচালক, চিত্র নাট্যকার।
তার আদিনিবাস বাংলাদেশের ময়মনসিংহের জয়সিদ্ধিতে। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালের ২৬ এপ্রিল কলকাতায়। তার বাবা হেমেন্দ্র মোহন বসু ছিলেন ব্যবসায়ী। ছোটবেলা থেকেই নিতীন ফটোগ্রাফিতে (আলোকচিত্র বিদ্যা) আকৃষ্ট ছিলেন। বাবার কাছে চলচ্চিত্রসংক্রান্ত বহু বিষয়ে বিশেষ করে ফটোগ্রাফিতে তার হাতেখড়ি। ১৯৩৫ সালে তার পরিচালনায়ই সর্বপ্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্যে কণ্ঠদান প্রথার শুরু। ক্যামেরার কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিত্র পরিচালনাও শুরু করেন। তার পরিচালিত কুড়িটি ছবির মধ্যে চণ্ডীদাস, জীবনমরণ, দেশের মাটি, দিদি, কাশীনাথ উল্লেখযোগ্য।
নিতীন বসু ১৯২২ সালে ইংরেজি বিষয়ে প্রথম হয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে বিএসসিতে ভর্তি হলেও পরীক্ষা দেননি। ১৯৪৬ সালে তিনি নিউ থিয়েটার্স ছেড়ে বোম্বের চিত্রজগতে যান। সেখানে প্রায় কুড়িটি ছবি করেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম পথিকৃত্ হিসেবে ১৯৭৮ সালে সে দেশের সরকার তাকে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করেন।
১৮৮৫ সালের ১২ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন প্রত্নতত্ত্ব, উত্কীর্ণ লিপিতত্ত্ব ও প্রাচীন হস্তলিপি বিষয়ের পথপ্রদর্শক ও সাহিত্যিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। মতিলাল ও কালিমতি ছিলেন তার পিতামাতা। রাখালদাস ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
মহেঞ্জোদারোর আবিষ্কর্তা হিসেবেই তিনি বহুল পরিচিত। তিনিই প্রথম আদি বাংলালিপির প্রতি পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ভারতীয় মুদ্রা গবেষণার ক্ষেত্রে ‘প্রাচীন মুদ্রা, প্রথম পর্ব (বাংলায় লিখিত)’ ছিল রাখালদাসের একটি বড় অবদান।
ভারতীয় শিল্পকলার চর্চায় রাখালদাসের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো তার মৃত্যুর পর ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত ইস্টার্ন ইন্ডিয়ান মেডিয়েভাল স্কুল অব স্কাল্পচার গ্রন্থটি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ দ্য অরিজিন অব দ্য বেঙ্গলি স্ক্রিপ্টসের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্যাদাকর জুবিলী গবেষণা পুরস্কার লাভ করেন। পশ্চিম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে তিনি গ্রিক বিজয়স্তম্ভের সন্ধানে সিন্ধু অঞ্চলে গিয়েছিলেন এবং ঢিবির শীর্ষদেশে বৌদ্ধবিহারের খননকালে তিনি এমন কতগুলো নিদর্শনের সন্ধান পান যা তাকে হরপ্পায় সাহানী কর্তৃক প্রাপ্ত অনুরূপ নিদর্শনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এ সভ্যতা সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে বেশ কিছু প্রবন্ধ ও গ্রন্থে।
১৯১০ সালে রাখালদাস কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা এবং ১৯১১ সালে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এছাড়া ১৯২৮ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৩০ সালের ২৩ মে কলকাতায় তিনি পরলোকগমন করেন।
উপমহাদেশের বরেণ্য চিত্রকর যামিনী রায় ১৮৮৭ সালের ১১ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুরা জেলার বেলিয়াতোর গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৬ বছর বয়সে কলকাতায় সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। এখানে তিনি যা শিখেছিলেন তা ছিল গতানুগতিক। ১৯০৮ সালে ফাইন আর্টে তিনি ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। অচিরেই তিনি অনুধাবন করেন যে আঁকাআঁকির ব্যাপারে পশ্চিমা ধারার পরিবর্তে নিজস্ব সংস্কৃতিই হবে উত্তম অনুপ্রেরণা। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্যে এ জন্যই তিনি লোক এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি বেছে নিয়েছিলেন। কালিঘাট পটচিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি ইমপ্রেসনিস্ট ল্যান্ডস্কেপ ধারা থেকে সরে আসেন। সাঁওতালদের সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিনি নিজস্ব ধারার পরীক্ষা চালান। শিল্পকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি থেকে সমাজের সর্বত্র রূপ দিতে চেয়েছিলেন তিনি; যাতে ভারতীয় চিত্রকলার আলাদা বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। ১৯৫৪ সালে তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এবং আলবার্ট মিউজিয়ামে তার চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। নিজেকে তিনি পটুয়া পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করতেন। ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল রাজবাড়ীর পাংশায় জন্মগ্রহণ করেন শিশুসাহিত্যিক, শিশু সংগঠক ও সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান। দাদা ভাই নামেই তিনি বহুল পরিচিত। শিশু সংগঠন কচিকাঁচার প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তার পিতামহ মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী ছিলেন মাসিক কোহিনূর পত্রিকার সম্পাদক। ১৯৪৮ সালে দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার মধ্য দিয়ে সংবাদপত্র জগতে তার য...াত্রা শুরু। তিনি ওই পত্রিকার শিশু বিভাগের সম্পাদক ছিলেন।১৯৫৫ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন মফস্বল সম্পাদক হিসেবে। একই সালে তিনি ইত্তেফাকের শিশু বিভাগেও দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এ পত্রিকার সাহিত্য এবং ফিচার বিভাগের প্রধান হন। ১৯৫৬ সালে তিনি কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলা একাডেমী এবং ১৯৯৪ সালে শিশু একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। আজব হলেও গুজব নয়, হাট্টিমাটিম টিম এবং খোকন খোকন ডাক পাড়ি তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম। ২০০০ সালে তিনি মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ছিলেন শিশুর মতো সরল। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অগ্রপথিক।১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী মঙ্গল পাণ্ডে ১৮৫৭ সালের ৮ এপ্রিল কলকাতার ব্যারাকপুরে শহীদ হন। বলা যায় সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রদূত তিনি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সাধারণ সিপাহী হলেও ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের মূল নায়ক ছিলেন তিনিই। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ পাণ্ডে প্রথম তার... ঊর্ধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তাকে আক্রমণ করে এই বিদ্রোহের সূচনা করেন। কথিত রয়েছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটিশ-ভারতে সিপাহীদের মধ্যে যে কার্তুজ সরবরাহ করত, তা ছিল প্রাণীর চর্বিমিশ্রিত। উল্লেখ্য, শূকর এবং গরু মুসলিম ও হিন্দুধর্মে নিষিদ্ধ। তাই যখন সিপাহীদের মধ্যে রটে গেল তারা যে কার্তুজ ব্যবহার করছে তা গরু কিংবা শূকরের চর্বিমিশ্রিত, তখন তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কারণ দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে কার্তুজের খোসা ছাড়াতে হতো। বিশেষ করে, মঙ্গল পাণ্ডে ছিলেন ধর্মভীরু। ধর্মানুভূতিতে আঘাতের প্রতিবাদে তিনি ফুঁসে ওঠেন এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সাধারণ সৈন্যদের সংগঠিত করেন। ১৮২৭ সালের ১৯ জুলাই পাণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন উত্তর প্রদেশের নাগওয়ায়। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ পাণ্ডেকে আটক করে ১৮৫৭ সালের এই দিনে ফাঁসিতে ঝোলায়।
বাংলা সাহিত্যে জীবনানন্দ-উত্তর যুগের একজন প্রধান লিরিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ পরলোকগমন করেন। পঞ্চাশের দশকে লেখালেখি শুরু করলেও ষাটের দশকের কবি হিসেবেই স্বীকৃত তিনি। ১৯৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর শক্তি চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের জয়নগরের মজিলপুরের একটি দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। দারিদ...্র্যের কারণে তিনি পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়েন এবং সাহিত্যকে জীবিকা করার উদ্দেশ্যে উপন্যাস লেখা শুরু করেন। তার প্রথম উপন্যাস কুয়োতলা। তার প্রথম কাব্য সংকলন ‘হে প্রেম, হে নৈঃশব্দ্য’। চাইবাসায় বাল্যবন্ধু সমীর রায়ের বাড়িতে আড়াই বছরের অতিথি থাকাকালে তিনি সমীরের শ্যালিকার প্রেমে পড়েছিলেন। এ থেকেই তিনি ঔপন্যাসিক থেকে রবীন্দ্র-পরবর্তী সবচেয় শক্তিশালী লিরিক কবিতে পরিণত হন। পরবর্তী ৩২ বছর প্রায় আড়াই হাজারের মতো কবিতা লিখেন। ৪৫টি বই আকারে এগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৬১ সালে সূচিত হাংরি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। ১৯৬৩ সালে তিনি হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করে কৃত্তিবাস ম্যাগাজিনে যোগ দিয়েছিলেন। আজীবন ভবঘুরে ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।